কে কবে কোথা থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন


চর্যাপদ

          চর্যাপদ বাংলা ভাষায় লেখা প্রাচীনতম সাহিত্য উপাদান। চর্যাপদ মূলত বৌদ্ধতান্ত্রিক পদ সংকলন।বৌদ্ধ সহজিয়াদের আধ্যাত্মিক সাধন সংগীত হল চর্যাগীতিকা গুলো।চর্যাপদের ভাব ও ভাষা দুই-ই বাঙালির।চর্যাপদ শুধু বাংলা ভাষা কেন, সমস্ত পূর্ব ভারতের নব্যভাষার প্রথম গ্রন্থ। চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে রয়েছে মতবিরোধ। ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের রচনাকাল ৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ এবং ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ।
 সম্প্রতি জানা গেছে পুথিটির প্রকৃত নাম চর্যাগীতিকোষ।

         এটি আবিষ্কারের আগে সাহিত্যের ইতিহাস লেখকেরা মনে করতেন, ময়নামতির গান, গোরক্ষবিজয়, শূন্যপুরাণ, ডাক ও খনার বচন, রূপকথা এইগুলি প্রাচীনতম বাংলা সাহিত্যের দৃষ্টান্ত। কিন্তু বর্তমান কালের আবিষ্কার এবং গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে উল্লিখিত গ্রন্থ বা কাহিনী প্রাচীন যুগের নয় অনেক পরবর্তীকালে রচনা। বাংলা ভাষায় লেখা প্রাচীনতম সাহিত্যিক দৃষ্টান্ত হিসেবে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় নামে বৌদ্ধ তান্ত্রিক পদ সংকলনকে উপস্থাপিত করতে পারা যায়।

        পাল রাজাদের  আমলে চর্যাপদের  বিকাশ ঘটেছিল। কারণ বাংলার পাল রাজারা ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। পাল বংশের পতনের পর বাংলার সিংহাসনে আসে সেন বংশ। সেন রাজাদের থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য পালরা নেপালে চলে যায়। এর ফলে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন বাংলাদেশের বাইরে নেপালে পাওয়া যায়।

           ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিংহের পুরোহিত পুত্র রাধাকিষণ লর্ড লরেন্সকে অনুরোধ জানায় ভারতের সকল ভাষার পুথি সংরক্ষণের জন্য।  প্রাদেশিক গভর্নরদের সাথে পরামর্শ করে সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সাহায্যে বঙ্গীয় এশিয়াটিক সোসাইটি পুঁথি সংগ্রহের কাজ শুরু করে। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সংস্কৃতে রচিত বৌদ্ধ  ধর্মের অনেক গুলি সাহিত্যের পুঁথি প্রাপ্ত হন। "Sanskrit Buddist Literature in Nepal" গ্রন্থে সেগুলোর তালিকা প্রকাশ করেন।
রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মৃত্যুর পর ১৮৯১ সালে বঙ্গীয় এশিয়াটিক  সোসাইটি দায়িত্ব দেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে। প্রাচীন সংস্কৃত পুথিপত্র সন্ধান করতে গিয়ে তার ধারণা হয় প্রাচীন যুগে বৌদ্ধ তান্ত্রিক মতালম্বী সহজিয়া সিদ্ধাচার্যগণ বাংলা ভাষায় কিছু লিখে থাকবেন।তাই তিনি নেপালের রাজদরবারের তিনবার পুথি সন্ধান করতে যান। তিনি ১৮৯৭ এবং ১৮৯৮ সালে দুইবার নেপালে যান। তৃতীয়বার ১৯০৭ সালে তিনি নেপালের রয়েল লাইব্রেরী( রাজ গ্রন্থশালা) থেকে আবিষ্কার করেন বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ চর্যাপদ।পুথিটি প্রাচীন বাংলা ও নেপালি অক্ষরে লিখিত। তিনি পরে দেখলেন এ ভাষা  বাংলা, যদি ও অতি প্রাচীন, এবং বৌদ্ধ সহজিয়া গুরুদের রহস্যময় ভাষায় লেখা বলে এর গূর অর্থ উদ্ধার সহজ ব্যাপার না।

            হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে যে সমস্ত পুথি আবিষ্কার করেন তার মধ্যে যেগুলি তার মতে প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত মনে হয় ছিল সেগুলি একত্র করে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে "হাজার বছরের পুরনো বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা" নামে প্রকাশ করেন।এর অন্তর্ভুক্ত ছিল 

    • চর্যাচর্যবিনিশ্চয়
    • সরহপাদের দোহা
    • কৃষ্ণণপাদের দোহা
    • ডাকার্ণব      
 কিন্তু পরবর্তীকালে ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় শুধু প্রাচীনতম বাংলা ভাষায় লেখা অন্য তিনটি বাংলা ভাষার নয়।
         
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই পুথি আবিষ্কার ও সম্পাদনা করে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে হারানো দৃষ্টান্ত উদ্ধার করেন। এই পুথির সঙ্গে একটি সংস্কৃত টিকা দেওয়া ছিল বলে শাস্ত্রী মহাশয় এর কিঞ্চিৎ অর্থ উদ্ধার করেন এবং এখন আমরা চর্যাগুলির তাৎপর্য সম্বন্ধে মোটামুটি অবহিত হয়েছি তার কারণ ঐ সংস্কৃত টিকার সহায়তা। টীকাকারের নাম মুনিদত্ত।

আরো জানতে আমাদের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন: Click here

                             

Comments

  1. চর্যাপদ সম্পর্কে আরো তথ্য চাই

    ReplyDelete

Post a Comment