হায়া সোফিয়ার ইতিহাস


তুরস্কের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হলো হায়া সোফিয়া কে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরিত করা। হায়া সোফিয়া শব্দের গ্রিস অর্থ হলো "পবিত্র জ্ঞান"। মধ্যযুগের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন এটি। হায়া সোফিয়া প্রথমে গির্জা পরে রোমান সাম্রাজ্যে মুসলিম শাসনের আওতায় আসলে এটিকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তুরস্কের খেলাফতের পতন হলে প্রতিষ্ঠিত হয়  সেক্যুলারিজম সরকার। আধুনিক তুরস্কের জনক "মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক পাশা'' এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে।যা বর্তমান সরকার পর্যন্ত বলাবৎ ছিল। এই সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হায়া  সোফিয়া আবার মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।
হায়া সোফিয়া ৫৩২ এবং ৫৭৩ এর মাঝামাঝি সময়ে কনস্টান্টিনোপলে জাস্টিনিয়ান প্রথমের আদেশে খ্রিষ্টান ক্যাথেড্রল  হিসেবে নির্মিত হয়। হায়া সোফিয়ার ডিজাইনার ছিলেন ব্যাসিলিকাটি  মাইলাতাসের গ্রিক জিওমিটার ইসিডোর এবং ট্রেলসের অ্যান্থিমিয়াস। হায়া সোফিয়া প্রায় এক হাজার  বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম ক্যাথেড্রল হিসেবে রয়ে গেছিল।  
হায়া সোফিয়া চতুর্থ ক্রুসেডরদের দ্বারা ১২০৪ সালে লাতিন সাম্রাজ্যের অধীনে রোমান ক্যাথলিক চার্চে রূপান্তর করা হয়। আবার বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে ফিরে আসে ১২৬১ সালে এবং পুনরায় রোমান ক্যাথেড্রল এ রুপান্তর করা হয়।
কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটে ১৪৫৩ সালে এরপর হায়া সোফিয়া অন্তর্ভুক্ত অটোমান সাম্রাজ্যে। হায়া সোফিয়া অটোমান সাম্রাজ্য আসার পর খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে নিজ অর্থায়নে ক্রায় করে নেন মুসলিম শাসক ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ। তারপরে এটিকে মসজিদে রূপান্তর করেন। এবং নতুন নাম রাখা হয় "ইম্পেরিয়াল মসজিদ"। এর মধ্যে সমাহিত করা মহাবিশপদেরকে চার্চ অফ  দ্যা  হোলিত অ্যাপোস্টলে স্থানান্তিরক করেন। চার্চবেল বা ঘন্টা, বেদী, আইকনোস্টেসি, যীশু তাঁর মা মেরি খ্রিষ্টান সাধু এবং স্বর্গদূতদের চিত্রিত মোজাইক গুলি সরানো হয়েছিল এবং ধ্বংস করা হয়েছিল।এরপরে এতে ইসলামী স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়। যুক্ত করা হয় মিম্বার, চারটি মিনার এবং একটি মিহরাব যা  প্রার্থনার দিক নির্দেশন করে। ইম্পেরিয়াল মসজিদ বা হায়া সোফিয়া প্রায় ৫০০ বছর মুসলিমরা নামাজ আদায় করে। তুরস্কের প্রধান মসজিদ "সুলতান আহমেদ মসজিদ " যা ব্লু মসজিদ  নামে পরিচিত। ১৬১৬ সালে স্থাপিত হয়  ব্লু মসজিদ কিন্তু  এর পূর্বে  হায়া সোফিয়াই  ছিল প্রধান মসজিদ।
১৯২৩ সালের  ২৯ শে অক্টোবর কামাল আতাতুর্ক পাশা স্বাধীন তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়ে আটোমান শাসন বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তার ধর্মনিরপেক্ষ সরকার হায়া সোফিয়াকে বন্ধ ঘোষণা করে যাতে কোন জাতিগত দাঙ্গার সৃষ্টি না হয়। ১৯৩৫ সালে মসজিদকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
২০১৮ সালের ৩১ মার্চ তুরস্কে রাষ্ট্রপতি রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান ফাতেহ সুলতান মোহাম্মদ সহ হায়া সোফিয়ায় কাজ করা সকলের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তুরস্কের শীর্ষ আদালত এটাকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তর করার রায় ঘোষণা করেন ১০ জুলাই ২০২০ তারিখ রোজ শুক্রবার। প্রায় ৮৬ বছর পর এই মসজিদে আযান দেওয়া হয় এবং নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

Comments